হন্তদন্ত হয়ে ঘরে ঢুকলো সায়েম। কিছু একটা খুঁজছে। বরাবরের মতই সে খুঁজে পেতে ব্যর্থ হলো, এবং যথারীতি মায়ের দ্বারস্থ হলো।
-মা, মা!
-কী হলো?
-আমার ব্রেইনটা কোথায় গেলো!
এমন অদ্ভুত প্রশ্ন শুনলে যে কেউ আকাশ থেকে পড়বে, যদি না তিনি ভুলোমনা, অতি নির্ভরশীল ছেলের মা হন।
-কোন সাইডের ব্রেইন? ডান না বাম?
এই প্রশ্ন শুনে সায়েম থতমত খেয়ে গেলো। তার মা অতিশয় বুদ্ধিমতী, এবং জ্ঞানী একজন মানুষ। প্রতিনিয়তই সে তার কাছ থেকে কিছু না কিছু শিখছে! আজ নতুন একটা জিনিস শেখা হবে বুঝতেই পারছে।
-ব্রেইনের আবার ডান-বাম কি তাই ভাবছিস? আয় বোস, তোকে দুই পাশের ব্রেইন নিয়ে খুলে বলি। মানুষের মস্তিষ্কের দুই পাশ ভিন্ন দুটি দক্ষতায় পারদর্শী। যারা বাম পাশ বেশি ব্যবহার করে, তারা বিশ্লেষণ জাতীয় কাজ বেশি ভালো পারে। আর ডান পাশ ভালো ক্রিয়েটিভিটির জন্যে।
-কোনটা বেশি ভালো, মা?
-এটা বলা মুশকিল। নির্ভর করে কে কোনটা কীভাবে ব্যবহার করছে তার ওপর। তবে ভারসাম্য রক্ষা করাটা গুরুত্বপূর্ণ। তোকে দুই পাশই ব্যবহার করতে শিখতে হবে। কোন কিছুর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্যে মানুষ দুই পাশই ব্যবহার করে। ডান পাশ মনে রাখে সারাংশ, আর বাম পাশ খুটিনাটি সব ডিটেইলস মনে রাখতে সাহায্য করে। যত সহজে তুই দু পাশ ব্যবহার করতে পারবি, তত তুই জটিল চিন্তা করার ক্ষমতা অর্জন করবি।
-কীভাবে দুটো পাশ ব্যবহার করবো? বলো না মা, প্লিজ!
-চা টা খেয়ে বলছি। এত উতলা হবার কিছু নেই।
মা কিছুক্ষণের বিরতি নিয়ে আবার শুরু করলেন,
-নতুন আইডিয়া নিয়ে ভাব। যদি চারপাশে এমন মানুষজন থাকে, যে তারা নতুন নতুন আইডিয়া পছন্দ করে, এবং ভাবে, তাদের সাথে এসব নিয়ে ডিবেট কর, ব্রেইন স্টর্মিং কর, দলবদ্ধভাবে কাজ কর।
-কিন্তু এমন দল পাবো কোথায়?
-আধুনিক যুগে এ নিয়ে চিন্তা নেই। পত্রিকা পড়া, অনলাইনে ঘাঁটা এবং নিজের ভাবনার সাথে তুলনা করা, এভাবে কাজ এগুতে পারে। Evernote নামক একটা এ্যাপ আছে, ওটা বেশ কাজের। এটা মূলত আইডিয়া ক্যাপচারিং এ্যাপ। যা ভাবছিস, যা লিখছিস, তা তোর ফোন থেকে অন্য ডিভাইস গুলোতে সিংক করে দিবে, নেটে ছড়িয়ে দিবে এবং এভাবেই তুই পেয়ে যাবি তোর ভার্চুয়াল দল!
-কেমন যেন গোলমেলে ঠেকছে। আচ্ছা, ইউজ করলে বুঝতে পারবো। তুমি বলতে থাকো।
– নতুন নতুন কাজে এবং চ্যালেঞ্জে নিজেকে নিয়োজিত কর।
-যেমন?
-যেমন, নতুন কোন ভাষা শিখতে পারিস অথবা কোন বাদ্যযন্ত্র বাজাতে পারিস। একদম নতুন কিছু চর্চা করলে দুই পাশের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষিত হয়।
-আচ্ছা।
-যাও খেলো গিয়ে।
-কী? তোমার লেকচার দেয়া শেষ? আর এই দুপুরের রোদে মাঠে যাবে কোন বোকা!
-আমি ক্রিকেট বা ফুটবল খেলার কথা বলি নি বুদ্ধু! ম্যাথ এবং লজিক রিলেটেড গেমস খেল। যেমন, সুডোকু, চেকারস, দাবা, মাইনসুইপার।
-এগুলো বোরিং খেলা!
-কিন্তু খুব উপকারী। এগুলো খেলতে ব্রেইনের দুই পাশই ব্যবহৃত হয়।
-আচ্ছা খেলবো।
-জাগলিং পারিস?
-ঐ যে বল নিয়ে লোফালুফি খেলা?
-হ্যাঁ! এতে হ্যান্ড আই কো অর্ডিশন টা খুব ভালো হয়। ব্রেইনও ভালোই কসরত করে! কালার পেন এক্সারসাইজটা জানিস?
-না। এটা আবার কী বস্তু?
-সাতটা ভিন্ন কালারের কলম নিবি। সাতটা বিপরীত রঙের নাম লিখবি। যেমন লাল কলম দিয়ে লেখবি নীল, সবুজ দিয়ে লেখবি হলুদ। এইবার শব্দগুলো পড়ার বদলে রঙ গুলো পড়। তোর ডান দিকের ব্রেইন কালার দেখবে, আর বাম দিকের ব্রেইন শব্দ পড়বে। দারুণ না?
-আমার তো শুনেই মাথা ঘুরছে!
-তাহলে এবার একটা সহজ, কিন্তু কাজের টিপস দেই। কাজকর্মে মাঝেমধ্যে ডান হাতের বদলে বাম হাত ব্যবহার করবি।
-এটা পছন্দ হয়েছে!
-ম্যাথ প্রবলেম গুলো ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে সল্ভ করার চেষ্টা করবি।
-ওরে বাবা!
-ওরে বাবা আবার কী! ব্রেইন খাটাস না দেখেই তো দরকারের সময়ে খুঁজতে গেলে আমার কাছে আসতে হয়। তোকে যে টিপস গুলো দিলাম, এগুলো প্র্যাকটিস কর, তাহলেই আর “মা, মা! আমার ব্রেইন কোথায়” বলে চিল্লাতে হবে না!
রকমারিতে রয়েছে এমন বইয়ের বিপুল সম্ভার, যা আপনাকে ভাবতে শেখাবে, মাথা খাটাতে হবে, বৃদ্ধি পাবে ভাবনার পরিসর। এমন কিছু বই হলো…
প্রাণের মাঝে গণিত বাজে (বীজগণিতের-গান)
গল্পে জল্পে জেনেটিক্স-১ম ও ২য় খণ্ড (রকমারি-কালেকশন)
Write a Comment